একুশে সিলেট ডেস্ক
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ছাত্রদলের এক নেতা গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনায় আরো ছয়জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতার নাম ইব্রাহিম মাসুম (২৫)। তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তাকে নোয়াখালীর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) উপজেলার আমানউল্যাহপুর ইউনিয়নের মহেশপুর ও কাঁচিহাটা সর্দার দিঘির পাড় এলাকায় ছাত্রদল-ছাত্র শিবিরের মধ্যে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পোঁছালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আমানউল্যাহপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশপুরে মো. সোহেল নামে জামায়াতের একজন সমর্থককে মারধর করে কিছু দুর্বৃত্ত। বিকালে স্থানীয় শিবির কর্মী মো. রাশেদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবির ছাত্রদলের কর্মীদের দায়ী করে।
এর জেরে শিবিরের একদল কর্মী ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচিহাটা সর্দার দিঘির পাড় এলাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ছাত্রদলের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম মাসুম পায়ে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে পাঁচ জন আহত হন।
বেগমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, বুধবার সকালে স্থানীয় কাঁচিহাটা বাজারের পাশে একটি ঘরে স্থানীয় এক যুবক ইয়াবা সেবন করছিল। ওই সময় কিছু যুবক তাকে আটক করে। তখন ছাত্রদল নেতা মাসুম মাদক সেবীকে মারধর করতে উদ্যত হয়। তখন একই এলাকার শিবিরের কয়েকজন লোক মুঠোফোনে কল দিয়ে মাসুমকে জানায় বিষয়টি বিকেলে বসে সমাধান করা হবে। তারা যেন আটক ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। তাৎক্ষণিক আটক ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার দিকে মাসুম কাঁচিহাটা বাজারের একটি দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। সেখানে কয়েকজন ছেলে এসে তাকে মারধর করে। এরপর মাসুম একটি ফার্মেসি দোকানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছিলো। হঠাৎ কয়েকজন ছেলে মোটরসাইকেল নিয়ে এসে পুনরায় মাসুমের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। পরবর্তীতে মাসুমের বাম পেয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।
আহত আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম মাসুম বলেন, দুপুরের দিকে একই এলাকার মো. সোহেলকে ইয়াবা সেবনকালে ছাত্রদলের কয়েকজন হাতেনাতে আটক করেন। এ সময় এলাকার মুরব্বিরা তাকে হালকা মারধর করে তার পরিবারের কাছে সোপর্দ করেন। সোহেল একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। গত ৫ আগস্টের পর তিনি স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করতে শুরু করেন। যে কারণে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তার পক্ষ হয়ে অতর্কিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান।
বেগমগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির আবু জাহের বলেন, ছাত্রদলের কর্মীরা ৫ আগস্টের পর থেকে আমানউল্যাহপুরে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে মারধর করেছেন। মঙ্গলবার বিনা কারণে মারধর করা হয় জামায়াতের সমর্থক মো. সোহেল ও শিবির কর্মী মো. রাশেদকে। হামলায় রাশেদ অচেতন হয়ে যান। আমাদের কর্মীরা যখন রাশেদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত, তখন তৃতীয় কোনও একটি পক্ষ ছাত্রদলের নেতা মাসুমের ওপর হামলা করে।
জেলা জামায়াতের আমির ইসহাক খন্দকার বলেন, যে ছেলেটাকে সকালে মারধর করা হয়েছে তিনি জামায়াত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তবে কে বা কাহারা ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা করছে বিষয়টি জানিনা।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি খুবই দু:জনক। অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিরা বিভাজন সৃষ্টি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এবিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ছাত্রদল নেতাকে গুলি করার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) মো.আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। গুলিবিদ্ধ যুবক ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply